নিজস্ব সংবাদদাতা, পুরুলিয়া, ৮ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবারঃ

বাঘের আতঙ্কে কার্যত ঘরবন্দী ঝাড়খন্ডের চান্ডিল মহকুমার অন্তর্গত বালিডি, তুলগ্রাম, চৌকা, দুলমি সহ একাধিক গ্রামের মানুষ। এদিকে গৃহপালিত গবাদি পশু চরানো ছাড়াও এইসব এলাকার বহু মানুষ স্থানীয় জঙ্গলের উপর জীবিকা বিষয়ে নির্ভরশীল হওয়ায়, বর্তমানে চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। চান্ডিলের এইসব এলাকা সংলগ্ন জঙ্গল পরিদর্শনে বন দপ্তর বেশ কিছু স্থানে বাঘের পা-এর ছাপ খুঁজে পাওয়ায় আতঙ্ক আরো বহুগুণ ছড়িয়েছে। অন্যদিকে এইসব জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা থেকে পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি, বলরামপুরের সীমান্তবর্তী জঙ্গল ঘেরা এলাকার দূরত্ব মাত্র ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার। ফলে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে এ জেলাতেও। যদিও বন দপ্তর সূত্রে আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে রুটিন টহলদারি তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে কোথাও কোথাও নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে স্থানীয়দের আতঙ্ক কাটেনি তাতে। কেউ কেউ বলছেন, দু সপ্তাহ আগেই রেডিও কলার লাগিয়ে রাখা সত্ত্বেও ‘জিনাত’ যেভাবে ৯ দিন দুই রাজ্যের বন নিরাপত্তা কর্মীদের নাজেহাল করেছে, তাতে এই নতুন অতিথি কি করবে তা বলা মুশকিল। কারন এর তো রেডিও কলারও লাগানো নেই, দাবি স্থানীয়দের।

প্রসঙ্গত, ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। প্রত্যক্ষদর্শী চান্ডিল মহকুমার বালিডি গ্রামের নাবালক সুমিত মাহাত অন্যান্য দিনের মতই গবাদি পশু নিয়ে বালিডি পাহাড়তলির জঙ্গলে যায় চরাতে। ছাগলের খাবার জোগাড় করতে সে একটি বড় গাছে উঠলে দেখতে পায়, বাঘে একটি বাছুরকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এরপরই আতঙ্কে সে জঙ্গল ছেড়ে এসে গ্রামে খবর দেয়। দল বেঁধে গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে গেলে দেখেন, বেশ কিছু স্থানে গবাদি পশুর ‘হাড়-গোড়-মাস’ ছড়িয়ে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। খবর দেওয়া হয় চান্ডিল বন বিভাগে। বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে বাঘের পা-এর ছাপ দেখতে পেয়ে দ্রুত টহলদারি বাড়ান। হাড়-মাসে কামড়ের ছাপ দেখে বনকর্মীদের সন্দেহ দৃঢ় হয়। শুরু হয় জোর প্রচার। বাঘ খুঁজতে এক জায়গায় বসানো হয় ট্র্যাপ ক্যামেরা। এদিকে বালিডি জঙ্গল ছাড়াও আরো কয়েকটি বনাঞ্চলে বন দপ্তর বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেলে আশপাশের চৌকা, তুলগ্রাম, দুলমি সহ একাধিক গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ঘরবন্দী হন। আতঙ্ক ছড়ায় মাত্র ২০/২২ কিমি দূরত্বের বাঘমুন্ডি, বলরামপুরের ঝাড়খন্ড সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতেও। স্থানীয়রা বলছেন, বাঘের পক্ষে জঙ্গলে জঙ্গলে এই পথটা অতিক্রম করা মাত্র এক রাতের ব্যাপার।

অবশ্য জেলার ওইসব সীমান্তবর্তী আতঙ্কিত মানুষদের জন্য আপাতত সাময়িক সুখবর এই যে, মঙ্গলবার শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী চৌকা থানার পাটা এলাকায় যেভাবে পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে, তাতে চান্ডিল জেলা বনধিকারিকরা অনুমান করছেন বাঘটি দলমার ঘন জঙ্গলের দিকে এগোচ্ছে।

শেয়ার করুন

You cannot copy content of this page