PHOTO:Pallab Mandal
নিজস্ব সংবাদদাতা , পুরুলিয়া
৪ আগস্ট , ২০২০

কোরোনা কারনে সরকারি দীর্ঘ লকডাউনের নির্দেশ মানুষকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে চিরাচরিত বিনোদনের দিকে। লকডাউন আপামর মানুষকে করেছে গৃহবন্দি । একদিকে যেমন মানুষের দৈনন্দিন কর্মক্ষেত্র ও জীবনচর্চার ক্ষেত্রগুলিতে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা, জটিলতা বা কোন কোন ক্ষেত্রে বিপর্যয়ও, তেমনি অন্যদিকে  পুরুলিয়া শহরের গৃহবন্দী মানুষকে এই লকডাউনই বহু বছর পরে আবার নিয়ে গেছে চিরাচরিত বিনোদন ঘুড়ি ওড়ানোর দিকেও। প্রায় বহু বছর পরে এসময় আকাশে ঘুড়ির মেলা। ইন্টারনেট, মোবাইল, স্যোশাল মিডিয়ার দাপট আর নাগরিক জীবনের দৌড় যে উড্ডীন ঘুড়ির জীবন কেড়ে নিয়েছিল, দীর্ঘ লকডাউন যেন তা আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। একটানা গৃহবন্দি মানুষ স্যোশাল মিডিয়ার প্রতিই কি তাহলে বিরক্ত? হয়ত তাই। আর সে কারনেই পুরুলিয়ার মত নাগরিক জীবনের দিকে হেঁটে যাওয়া শহরের মানুষকে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় অবলুপ্তির দিকে চলে যাওয়া ঘুড়ি ওড়ানোর বিনোদন এবার মাতিয়ে তুলেছে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে মফস্বল এলাকায় ঘুড়ি উড়লেও শহর ও শহরতলীর আকাশে উড্ডীন ঘুড়ির দেখা পাওয়া প্রায় বিরল ঘটনা হয়ে গেছিল। শহরের নতুন প্রজন্মের স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের ইদানিং কালে ঘুড়ি ওড়াতে খুব একটা দেখা যায় না। শহরের নব প্রজন্মের অনেকেই হয়ত ভো-কাট্টা শব্দটির সাথেই পরিচিত নয়। একই সঙ্গে শহরের পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট মাঠের সংখ্যাও প্রায় নেই বললেই চলে। সঙ্গে রয়েছে ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল, স্যোশাল মিডিয়ার হাতছানি।     কিন্ত গত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সারা দেশে কোরোনা কারনে লকডাউন ও সরকারি বিধি নিষেধে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের রুটিনই যেন পাল্টে দিয়েছে। একটানা গৃহবন্দী দশায় ইন্টারনেট বা কম্পিউটার বা মোবাইল বোধহয় একঘেঁয়েমিতে পরিনত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল ৪টে বাজলেই আকাশের বুকে পত পত করে লাল-নীল-বেগুনি-হলুদ-সবুজ-ছিটেফোঁটা হরেকরকম ঘুড়ির মেলা লেগে যাচ্ছে। দূর থেকে ভেসে আসছে সেই “ভো-কাট্টা” ধ্বনি।  শহরের যাঁরা প্রায় চল্লিশ – পঞ্চাশের কোঠায় তাঁরা বলছেন, “লকডাউনের জন্য যে এত ঘুড়ির মেলা আকাশে, তা দেখে বহুদিন বাদে তাদের কৈশোর বা যৌবনের দিনগুলির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।” কোথাও কোথাও সরকারি চাকুরি থেকে অবসরপ্রাপ্তরাও ঘুড়ি-লাটাই নিয়ে ওড়াচ্ছেন ঘুড়ি। শহরের দুই ঘুড়ি-সুতো-লাটাই বিক্রেতা বরাকর রোডের মধুবাবু কিংবা বি বি দাস রোডের রাধিয়াবাবুরা বলছেন, এবছর এই লকডাউনের বাজারেও ঘুড়ি-সুতো-লাটাইয়ের বিক্রি যথেষ্ট বেশি।        অন্যদিকে এটাও ঠিক যে এই সময় যারা ঘুড়ি ওড়াচ্ছেন, ঘুড়ি, লাটাই, সুতো ইত্যাদি কিনতে বেরোনোর বিষয়েও যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে, যেন ঘুড়ি ওড়ানোর সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে তারা কোন বিপদে না পড়েন।       তবে সে যাইহোক, বর্ষা শুরুর আকাশে খন্ড খন্ড কালচে মেঘের পাশে ভো-কাট্টা না হওয়া সেইসব রঙিন ঘুড়িদের মানাচ্ছে বেশ।

শেয়ার করুন

You cannot copy content of this page